প্রধান শিক্ষক টি জে কলিন্স স্যারের আখ্যান

 


আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক টি জে কলিন্স স্যারের আখ্যান 

আমার প্রিয় আরমানিটোলা গভর্নমেন্ট হাই স্কুল। ১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক এই স্কুলের শাণ-শৌকত অনেক প্রশংসিত ছিল। আজকের প্রেক্ষাপটেও তা অমলিন। ব্রিটিশ রাজের সময় অবিভক্ত বাংলায় যে কয়টা স্কুল প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল তার অগ্রকাতারে ছিল আরমানিটোলা গভর্নমেন্ট হাই স্কুল। মোটা থামওয়ালা লাল ভবনের স্কুলটি দুজন প্রথিতযশা ব্রিটিশ শিক্ষকের স্মৃতি ধন্য। ড: ওয়েষ্ট ও টি,জে,কলিন্স। প্রিয় স্কুলের স্মৃতি সুরভি মেখে বসুন বলছি শুনুন টি,জে,কলিন্স স্যারের গল্প।

উনিশ শতকে বিশ্ব ছিল ব্রিটিশ নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক পতাকাবাহী। সময়ের সাথে কতবার যে ব্রিটিশ শাসকেরা ভোল পাল্টেছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। বহুত বছর আগে ব্রিটেনে রাজাই ছিল সর্বেসর্বা। ১২১৫ সালে রাজা জনের হাতে যখন রাজদন্ড তখন সে বুঝতে পারল ব্রিটিশরা আর রাজাকে দন্ডমুন্ডের কর্তা বলে মানছেনা,তারা গণতন্ত্র চাইছে। উপায়ন্তর না দেখে তিনি ম্যাগনাকার্টায় সই করে আইনের শাসন প্রবর্তন করেন। রাজা জনের এই ম্যাগনাকার্টায় সই করা নিয়ে একসময় একটি কৌতুকের খুব জনপ্রিয়তা ছিল বিশ্বব্যাপী ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোতে: একবার এক স্কুল পরিদর্শক শ্রেনীকক্ষ পরিদর্শনে গিয়ে জনৈক ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করলেন," ম্যাংনাকার্টা কে সই করেছে? ছাত্রটি ঘাবড়ে গিয়ে উত্তর দিল,"আমি করিনি স্যার"। সই- সবুত নিয়ে যত রং-রসিকতা করিনা কেন সই বা স্বাক্ষর যে মানুষের আত্মপরিচয়ের সাক্ষ্যবহ আরমানিটোলা স্কুলের বর্নাঢ্য ইতিহাসে টি জে কলিন্স স্যারকে কেন্দ্র করে এই শিক্ষনীয় বিষয়টি এখনো আলো ছড়াচ্ছে। ম্যানচেস্টারের মানুষ টি জে কলিন্স স্যারের আরমানিটোলা অভিযান শুরু হয়েছিল খুব সম্ভব ১৯১০ সালে। ঢাকার ছেলেপুলেদের হালহকিকত খুব ভালো বুঝতে পারতেন তিনি। ১৯২২ সালের ঘটনা। কামরুদ্দীন নামের এক ছাত্র এলেন তৃতীয় শ্রেনীতে এডমিশন নিতে। ফরমে ছাত্রটি তার নাম সই করার সময় একটা বিপত্তি বাধঁল,সে স্বাক্ষর করল "Kamruddin"। 

কলিন্স স্যার ছাত্রটির দিকে স্নেহ পরবশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আরবি শিক্ষককে তলব করলেন নামের বানান আরবি সম্মত হলো কিনা সেটা জানার জন্য। কারণ ঢাকায় এসে কলিন্স স্যার বেশ বুঝতে পেরেছিলেন এ শহরের মুসলমানেরা তাদের সন্তানদের নাম আরবিতে রাখে এবং নামের একটি বিশেষ অর্থব্যঞ্জনা থাকে। হেড স্যারের আরবি শিক্ষককে ডেকে আনার উদ্দেশ্য হচ্ছে তিনি ছাত্রটির আরবি নামের বানান সঠিক ভাবে ইংরাজিতে প্রকাশ করতে পারবেন। ফরমটির দিকে এক দৃষ্টি দিয়েই মৌলভি স্যার বললেন, নামের বানান ভুল হয়েছে। সঠিক বানান হবে "Quamaruddin"। হেড মাষ্টার টি জে কলিন্স স্যার ছাত্রটির দিকে নতুন আরেকটি ফরম এগিয়ে দিয়ে বললেন নামের স্বাক্ষর সঠিক ভাবে লেখার জন্য। কিন্তু একরোখা ছাত্রটি গোঁ ধরল নামের বানান সে পাল্টাবেনা,যেমন আছে তেমনই থাকবে। তার যুক্তি হচ্ছে ছেলেদের নামের আদ্যক্ষর "ক " হলে K দিয়ে লিখতে হবে আর মেয়েদের ক্ষেত্রে লিখতে হবে Q দিয়ে।যেমনিভাবে ইংরেজিতে রাজার বেলায় King আর রানির বেলায় Queen , ঠিক তেমনি। ছাত্রটির সাফ কথা ইংরেজি উচ্চারণে K আর Q এর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই,আমি নামের নামের বানান পাল্টাবোনা। আরবি বড় ক্বাফের মত উচ্চারণ করলে নামের বানান ভুল হবে। ছোট্ট ছাত্রটির মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে মৌলভি সাহেব ঔদ্ধত্য হিসেবে দেখে রেগে আগুন হলেন আর কলিন্স স্যার সাবাসি জানিয়ে বললেন, "You write your name with "K" if you so like."





Written by:
Muhammad Arifur Rahman
Batch - 1990 
Writer and Researcher 


No comments:

Post a Comment